এই জগৎটা কতগুলি তরঙ্গ(wave) এর সমষ্টি মাত্র। আর এই তরঙ্গ বিভিন্ন তারঙ্গিক দৈর্ঘ্য(wave length) নিয়ে মুখ্যতঃ তিনটি রূপে আপেক্ষিক জগতে প্রবাহিত হয়ে চলছে। ১. জড়/শরীর তরঙ্গ (Physical wave), ২. মানস তরঙ্গ(Psychic Wave) ও আধ্মাত্মিক তরঙ্গ(Spiritual Wave). জীবদেহ যখন মানস তরঙ্গের সাথে সমান্তরালতা বজায় রেখে শরীর তরঙ্গ সুসামঞ্জস্যপূর্ণ চলতে থাকে তখন তাকে জীবন(Life) বলে।
এবার আসি মৃত্যু কি? শরীর তরঙ্গের সাথে মানস তরঙ্গের সমান্তরালতার যখনই বিচ্ছেদ ঘটে তখন তাকে মৃত্যু বলে। তিন কারনে মৃত্যু হতে পারে। যথাঃ- ১. শরীর সংক্রান্ত কারণ, ২. মন সংক্রান্ত কারণ ও ৩. আধ্যাত্মিক কারণ।
শরীর সংক্রান্ত কারণঃ আকস্মাৎ কোন দুর্ঘটনা বা আঘাত, বৃদ্ধত্ব বা রোগগত কারণে যদি কারো শরীর তরঙ্গ মানস তরঙ্গের সাথে সমান্তরলতা রক্ষা করতে না পারে তাহলে তার দৈহিক মৃত্যু ঘটে। এ মৃত্যু সাময়িক, কারণ মৃত ব্যক্তির সংস্কার তখনও অভূক্ত রয়ে গেছে। তাই তাকে অভূক্ত সংস্কার ভোগের জন্য সংস্কার অনুসারে পুনঃরায় জন্ম নিতে হবে।
মন সংক্রান্ত কারণঃ হঠাৎ কোন অত্যাধিক দুঃখদায়ক বা আনন্দদায়ক সংবাদ মানস তরঙ্গে অসাভাবিকতা সৃষ্টি করলেও তার মানস তরঙ্গ শরীর তরঙ্গের সাথে সমান্তরলতা রক্ষা করতে না পারলে দৈহিক মৃত্যু ঘটে। হৃদপিণ্ড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু অনেক সময় এই কারণে হয়ে থাকে। এই মৃত্যু দৈহিক কারণে মৃত্যুর মত। এই মৃত ব্যক্তিকে সংস্কার অনুসারে পুনরায় জন্ম নিতে হবে।
আধ্যাত্মিক কারণঃ নিরন্তর সাধনা অভ্যাসের ফলে এক সময়ে মন এত সুক্ষ্ম অর্থাৎ মানস তরঙ্গ এত দীর্ঘ সম্পন্ন হয়ে যায় যে শরীর তরঙ্গ মানস তরঙ্গের সাথে সমান্তরলতা রক্ষা করতে পারে না। সেই অবস্থায় মানস তরঙ্গ, অনন্ত তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সম্পন্ন আধ্যাত্মিক তরঙ্গের সাথে এক হয়ে মিশে যায়। একেই বলে সমাধি। সাধকের সংস্কার ক্ষয় হলে এই সমাধি স্থায়ী হয় ও সাধক মুক্তি বা মোক্ষ লাভ করে। সে অবস্থায় তার যে দৈহিক মৃত্যু তা আধ্যাত্মিক কারণে মৃত্যু বা মহামৃত্যু। মহামৃত্যুর পরে মানুষের আর পুনর্জন্ম হয় না। কারণ তখন তার সমস্ত সংস্কার ক্ষয় হয়ে গেছে।
যোগী পিকেবি প্রকাশ, পরিচালক, আনন্দম্ ইনস্টিটিউট অব যোগ এণ্ড যৌগিক হস্পিটাল। মেইলঃ yogabangla@gmail.com