আমাদের সাড়ে তিন হাত শরীরে ৫ ইঞ্চি লম্বা ও সাড়ে তিন ইঞ্চি প্রশস্ত ক্ষুদ্র হৃদযন্ত্রটি দেহ পরিচালনার প্রধান ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনের সাথে দেহ-কারখানার সমস্ত কিছুর যোগসূত্র রয়েছে। এই যন্ত্রটি দেহের সর্ব্বোচ্চস্থান মস্তিস্ক হইতে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত দেহের সর্বত্র বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করে। একটু যোগ চর্চা ও সঠিক খাদ্যভ্যাসেই হৃদরোগ থেকে নিরাময় ও প্রতিরোধ সম্ভব। বলেছেন পরিচালক যোগী পিকেবি প্রকাশ(প্রমিথিয়াস চৌধুরী)।
আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানের পাশে কাপ্তান বাজারে আনন্দম্ ইনস্টিটিউট অব যোগ এন্ড যৌগিক চিকিৎসা আয়োজিত ঔষধ নির্ভরে পরাধীন যোগানুশীলনে হোন স্বাধীন শীর্ষক যৌগিক চিকিৎসা বিষয়ক যোগ সেমিনারে ইনস্টিটিউট এর পরিচালক এসব কথা বলেন।
হৃদরোগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেনঃ
১. পাকস্থলী ও হৃদযন্ত্রের মাঝে ব্যবধান মাত্র একটি ক্ষুদ্র মাংসপেশীর। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে পাকস্থলী অতিক্রিয় হয়ে বেড়ে যায়। ক্ষুদ্র মাংসপেশী চেপে হৃদযন্ত্রের উপরে চাপ সৃষ্টি করে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ায় বাঁধা সৃষ্টি করে। এরফলে হৃদরোগ হয়।
২. কোষ্ঠবদ্ধতার কারণে অন্ত্রে মল পচিয়া রক্ত দুষিত হয়। এই দুষিত রক্তের জীবাণু হৃদযন্ত্রের কোমল মাংসপেশীকে আক্রমণ করে দুর্বল করে দেয়।
৩. ক্রোধের কারণে শরীরের শক্তি বা উত্তেজনা অসম্ভব রকমে বৃদ্ধি পায়। আমাদের চোখ মুখ রক্তের ন্যায় লাল হইয়া উঠে। এমন অধিক শক্তি উৎপাদনের জন্য হৃদপিণ্ডকে অত্যধিক সক্রিয় হইয়া বেশি রক্ত সরবরাহ করিতে হয়। এই অতিক্রিয় হইয়া হৃদপিণ্ড ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায়।
৪. অতিরিক্ত আমিষ খাদ্য এবং ঘি, মাখন, ছানা, সন্দেশ, লুচি, হালুয়া প্রভৃতি খাদ্য গ্রহণে রক্তের প্রয়োজনীয় ক্ষারভাগ(alkality) নষ্ট হয়ে অত্যাধিক অম্লবিষ জমা হয়। ঐ বিষে রক্তবাহী শিরাগুলি সরু হয়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া দুর্বল হয়; ফলে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে হৃদরোগ সৃষ্টি হয়।
৫. অতিরিক্ত চর্বি সৃষ্টি হইলে হৃদযন্ত্রের পরিচালক স্নায়ুগুলিতেও ঐ চর্বি সঞ্চিত হয় এবং ইহার ফলে হৃদযন্ত্র আর স্বাভাবিকভাবে স্পন্দিত হইতে পারে না, ফলে সারা দেহে রক্ত সরবরাহ করিতে পারে না, হৃদরোগ হয়।
৬. অতিরিক্ত পরিমানে চা, কফি, তামাক, সিগারেট, মদ, আফিম ইত্যাদি মাদকদ্রব্য খাওয়ার ফলে উহার বিষে স্নায়ু, গ্রন্থি, ধমনী প্রভৃতি দেহের সমুদয় যন্ত্র দুর্বল ও অবসন্ন হইয়া পড়ে। হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতার ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
৭. রক্তচাপ বৃদ্ধি, বেরিবেরি, নিউমোনিয়া, প্লুরিসি, উপদংশ, বাত, যক্ষা প্রভৃতি রোগের ফলেও হৃদরোগ হতে পারে।
ঔষধ ছাড়া হৃদরোগের যৌগিক চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলেন, হৃদরোগের কারণগুলো উপলব্ধি করে এর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেই এই রোগ থেকে নিরাময় ও প্রতিরোধ সম্ভব। তারপরেও কিছু খাদ্যাভ্যাস ও যৌগিক চিকিৎসা উল্লেখ করা যেতে পারে।
যেমনঃ সকালেঃ প্রত্যহ পায়খানা পরিস্কারের ব্যবস্থা করা। ভোরেঃ ৪০০মিলি লিটার ঈষৎ গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না।
খাদ্যবিধিঃ হৃদরোগীর একসঙ্গে বেশি পরিমাণ খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। প্রত্যহ জল সাথে কিঞ্চিত লেবুর রস মিশাইয়া পান করিবে। জল কিংবা দুধের সহিত দিনে ৩/৪ বার ছোট এক চামচ মধু মিশিয়ে খাবে।
সকালেঃ সকালে খাবার নিষিদ্ধ
দুপুরেঃ অল্প পরিমানে খাবার গ্রহণ করিবে।
বিকেলেঃ রসালো ফল
রাতেঃ দুধ ও ফল ছাড়া(কলা বাদে) অন্যকোন খাদ্য গ্রহণ করিবে না।
নিষিদ্ধ খাবারঃ মাছ, মাংস, ডিম, গুরুপাক খাদ্য, তৈল, ঘিয়ে তৈরি খাবার, ছানা এবং ছানার তৈরি খাবার, রসগোল্লা, সন্দেশ প্রভৃতি আমিষ জাতীয় খাদ্য। কাচা লবণ নিষিদ্ধ। শাক-সব্জি খাবে, ভাত-রুটি কম খাবে।
যোগিক চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোগাক্রান্ত অবস্থায় শবাসনে শ্বাস-প্রশ্বাসের তালে তালে শ্বাস ত্যাগ ও শ্বাস গ্রহণ ইচ্ছাপূর্বক একটু দীর্ঘ করিবে তাহা হইলে অল্প সময়েই শ্বাস কষ্ট লাঘব হইবে। একখানি ভিজা তোয়াল বুকের উপর রাখিবে। ১৫/২০মিনিট অন্তর ঐ ভিজা তোয়ালের শীতলতার স্পর্শে হৃদযন্ত্রের অস্বাভাবিক স্পন্দন দ্রুত হ্রাস পাইবে।
হৃদরোগ প্রতিরোধ প্রসঙ্গে বলেন, যোগমুদ্রা, সহজ বিপরীতকরণী, পবণ মুক্তাসন, সহজ প্রাণায়াম, সহজ অগ্নিসার, ভ্রমণ প্রাণায়াম, অগ্নিসার ধৌতি অভ্যাসে এই হৃদরোগ থেকে নিরাময় ও ভাবীরোগের আক্রমণ থেকেও নিজেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।